বাংলাদেশ থেকে দৃশ্যমান শতাব্দীর সর্বশেষ পূর্ণ সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ
- ১৪:২৫
- কার্যক্রম প্রতিবেদন
- ২৭৮৩
অনেক প্রতীক্ষার প্রহর পেরিয়ে বাংলাদেশের উৎসুক মানুষ পর্যবেক্ষণ করল শতাব্দীর সর্বশেষ এবং দীর্ঘস্থায়ী পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। ২২ জুলাই, ২০০৯ বুধবার সংঘটিত এই মহাজাগতিক ঘটনা পর্যবেক্ষণে ‘পূর্ণ সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ কমিটি’ দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল। ডিসকাশন প্রজেক্ট, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ছায়ানট শিক্ষা কার্যক্রম নালন্দা, সমন্বিত শিক্ষা-সংস্কৃতি, বাংলাদেশ নেচার স্টাডি এন্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন, কসমিক কালচার নিয়ে গঠিত এই কমিটির মূল ক্যাম্প স্থাপন করা হয় পঞ্চগড়ের হাড়িভাসা ইউনিয়নের মাধূপাড়া গ্রামে এবং ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিন প্লাজায়। এই পর্যবেক্ষণ আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল বিআরবি কেবল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ।
পঞ্চগড়ের মাধূপাড়া গ্রামে বিজ্ঞান বক্তা আসিফের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পে পনের হাজারেরও বেশি মানুষ ফিল্টার চশমা দিয়ে সূর্যগ্রহণের দূর্লভ দৃশ্য অবলোকন করে। পাশাপাশি সাধারণকে সূর্যগ্রহণের ক্রিয়া-কৌশল এবং প্রচলিত নানা কুসংস্কার সম্বন্ধে সচেতন করা হয়। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় কসমিক কালচারের বিজ্ঞান কর্মীরা ফিল্টার চশমা’র মাধ্যমে সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করে। এছাড়া কমিটির পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের অন্যান্য ক্যাম্পগুলো আয়োজন করা হয় বরিশালের বেলস পার্ক উদ্যানে, চাপাইনবাবগঞ্জ আকিমুদ্দিন লাইব্রেরি, সৈয়দপুর, গাজীপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার দনিয়ায় আরজ আলী মাবব্বর পাঠাগার এ। এই ক্যাম্প থেকে সাধারণ মানুষের কাছে সূর্যগ্রহণের বিস্তারিত তুলে ধরার পাশাপাশি গ্রহণ চলাকালীন প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর পরিলক্ষিত বিভিন্ন প্রভাবের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বৈরি আবহাওয়ার কারণে কোথাও কোথাও পর্যবেক্ষণে বিঘ্ন ঘটলেও মানুষের উদ্দীপনা এবং বিজ্ঞান বিষয়ে সহজাত আগ্রহের কমতি ছিল না মোটেই। ঢাকা স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৫৯ মিনিট ২০ সেকেন্ডে প্রথম গ্রহণ (স্পর্শ) শুরু হয়, সর্বোচ্চ গ্রহণ ঘটে ৭টা ৫৭ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে এবং গ্রহণ শেষ হয় ৯টা ৩মিনিট ৪৮ সেকেন্ডে।
সূর্যগ্রহণ প্রকৃতির মনোরম একটি দৃশ্য, একটি মহাজাগতিক দূর্লভ ঘটনা। আপাতদৃষ্টিতে পৃথিবী থেকে চাঁদের আয়তন সূর্যের আয়তনের প্রায় অনুরূপ। কারণ, সূর্য চাঁদের চেয়ে ৪০০ গুণ বড় এবং ৪০০ গুণ দূরে অবস্থিত। তাই তারা একই সরলরেখায় মিলিত হলে চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। ফলে পৃথিবীতে নেমে আসে অন্ধকার এবং সাধারণত সূর্যের অদৃশ্যমান বহিস্থঃ আবহ জ্যোতির্বলয় দৃশ্যমান হয়। সৌরজগতের অন্য কোনো গ্রহের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। তাই কেবল পৃথিবী থেকেই সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। পূর্ণ সূর্যগ্রহণ তখনই ঘটে থাকে যখন সূর্য চাঁদ দ্বারা পুরোপুরি ঢেকে যায়। পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে চাঁদ তার উপবৃত্তাকার কক্ষপথের এমন স্থানে অবস্থান করে (অমাবস্যার সময়) যখন চাঁদ ও পৃথিবীর ব্যবধান অপেক্ষাকৃত কম থাকে। ফলে চাঁদ পৃথিবীর উপর ছায়ার সৃষ্টি করে। আর এই চাঁদের প্রচ্ছায়া অংশটি পুরোপুরি সূর্যকে আড়াল করে রাখে। পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময়, চাঁদ পৃথিবীর অপেক্ষাকৃত কাছে চলে আসে যা প্রচ্ছায়া হিসেবে পৃথিবীতে পতিত হয়। গাণিতিকভাবে বলতে গেলে এর উজ্জ্বলতা হয় ১.০০০ বা তার চেয়েও বেশি। প্রচ্ছায়া অংশটির মাঝে অবস্থানরত মানুষের কাছে তখন মনে হয় চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে রেখেছে - আর এটাই পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। যদিও পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সৌন্দর্য্যর মাঝে লুকায়িত থাকে না সূর্যের অস্পষ্ট করোনা ও অন্যান্য সৌর বৈশিষ্ট্যগুলো। সাধারণত জুলাই মাসে পৃথিবী যখন সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানে অবস্থান করে তখন পূর্ণগ্রহণ সংঘটিত হয়।
পূর্ণ সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ কমিটি মনে করে বৈচিত্রময় পূর্ণ সূর্যগ্রহণ যেমন একদিকে সাধারণ মানুষ ও সৌখিন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মাঝে সৃষ্টি করেছে প্রচন্ড কৌতূহল তেমনি অন্যদিকে বিজ্ঞানীদের জন্য খুলে দিয়েছে জ্ঞানের অনন্য দ্বার। সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণের আগ্রহ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশব্যাপি সৌরজগত, মহাবিশ্ব, প্রাণের উদ্ভব সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে দেশের মানুষ। পাশাপাশি এর মধ্যে দিয়েই কুসংস্কার মুক্ত একটি সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কমিটি কাজ করে যাবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে ১০৫ বছর পরে ২১১৪ সালের ৩ জুন পরবর্তী পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দৃশ্যমান হবে।